মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম এ এ খান চার দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে শুক্রবার (৭ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
মিয়ানমারে প্রবেশাধিকার না থাকায় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে বিলম্ব হচ্ছে জানিয়ে করিম খান বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার তদন্তে মিয়ানমারের সহযোগিতা না পেলে বিকল্প উপায় খুঁজবে আইসিসি। সেই বিকল্প পন্থা হতে পারে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সহযোগিতা। রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত কারা তা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন তারা।
রোহিঙ্গাদের বিচার প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করার ওপর জোর দিয়ে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি বলেন, আইসিসির তদন্তকারীরা সতর্কতার সঙ্গে ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কী ঘটেছিল যা তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল, সে সম্পর্কে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে। সেজন্যই তিনি মিয়ানমারে নির্যাতনের ঘটনার শিকার, প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন দেখেছেন। গত মার্চ মাস থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় তাদের কষ্ট ও দুর্দশা বেড়েছে। তিনবেলার বদলে দুবেলা খাবার খেতে পারছে। এ ছাড়া জনপ্রতি একজন রোহিঙ্গা দিনে নয় টাকা করে সহায়তা পাচ্ছেন। অথচ এখন একটি ডিমের দাম ১২ টাকা। তাহলে এ অর্থ দিয়ে তারা কীভাবে খাদ্য সহায়তা মেটাবে? এটা একটি মানবিক সমস্যা। এখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশ বা আইসিসির সমস্যা নয়, বরং এটি বৈশ্বিক সমস্যা।
বাংলাদেশে তার দ্বিতীয় এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে ভারতে বাংলাদেশের মানুষও আশ্রয় নিয়েছিলেন। সে কারণে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ ও এ দেশের সব মানুষের অবশ্যই প্রশংসা পাওয়া উচিত।
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির কাছে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত জীবন, শিশুদের শিক্ষা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা-সংঘর্ষ নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি জানান, তিনি এখানে এসেছেন রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে তাদের ওপর নির্যাতনের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য। তিনি কোনো দাতা বা উন্নয়ন সংস্থা নন, এমনকি ইউএনএইচআরসির প্রতিনিধিও নন। তাই এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তবে এ বিষয়গুলো তাদের দেখা উচিত। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার।
কবে নাগাদ রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার শেষ হবে এ প্রসঙ্গে করিম খান বলেন, ‘বিচার নিয়ে চূড়ান্ত তারিখ বলা সম্ভব নয়। আমরা রোহিঙ্গা নির্যাতনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। এ বিচারে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশে পরবর্তী সফরে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে অগ্রগতি হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির কৌঁসুলি এসা ফাল ও আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা সান্তাল ডেনিয়েলস উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান কৌঁসুলি। শনিবার (৭ জুলাই) সকালে তিনি ঢাকা ছাড়বেন।
পাঠকের মতামত